গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় একটি সংবাদ তুমুল জনপ্রিয়ভাবে প্রচার করা হয়। যেমন – ভেনাস বা শুক্র গ্রহে মিললো ফসফিন, তবে কি প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে সেখানে? [1] এর সত্যতা যাচাই করে দেখি, বাস্তবিক পক্ষেই শুক্র গ্রহে ফসফিন গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে। নেচারের একটি আর্টিকেলের শিরোনাম ছিলো এমন – Phosphine gas in the cloud decks of Venus’ (শুক্র গ্রহের বায়ুমণ্ডলের মেঘে ফসফিন গ্যাসের উপস্থিতি)। [2] ফসফিন সম্পর্কে যারা জানতে আগ্রহী, তাদের উদ্দেশ্যে দুই-চারটি কথা বলি।
ফসফিন হলো একটি ফসফরাস ও তিনটি হাইড্রোজেন পরমাণুর সমন্বয়ে গঠিত যৌগ। ফসফিন গ্যাস পৃথিবীতে সাধারণত একধরণের অণুজীব ত্যাগ করে এবং এই গ্যাস জীবনধারণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া কিছু কিছু গবেষকের মতে, ফসফিন গ্যাসের উপস্থিতি থাকা মানে জীবনের উপস্থিতি থাকা।[3]
বিষয়টি ছিল খুবই চাঞ্চল্যকর। আদিকালে মঙ্গলে পানি ছিল বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু তার পরেও এখনও সেখানে কোনো প্রকার জীবনের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। এদিকে শুক্র গ্রহে সরাসরি ফসফিন গ্যাসের উপস্থিতি মানে, সরাসরি জীবনের অস্তিত্ব প্রমাণ। এই বিষয়টি এতটাই চাঞ্চল্যকর ছিল যে, তার পরের দিনই, শুক্র গ্রহকে নিজেদের সম্পত্তি বলে ঘোষণা দেয় রাশিয়া। [4]
তাহলে ঠিক কি কারণে এর কয়েকমাসের ভিতর এই চাঞ্চল্যকর খবরটি কালের গর্ভে হারিয়ে যায়?
শুরু থেকে শুরু করি।
Jane S. Greaves এবং তার দল ALMA (Atacama Large Millimeter Array) রেডিও টেলিস্কোপ ব্যবহার করে শুক্র গ্রহের বায়ুমণ্ডল পর্যবেক্ষণ করছিলেন। গ্যাসগুলোর বর্ণালি বিশ্লেষণ করে তারা জানতে পেরেছিলেন, এ বর্ণালিগুলো পৃথিবীর ফসফিন গ্যাসের বর্ণালির সাথে মিলে যায়। জানুয়ারি মাসের ২৬ তারিখ arxiv.org preprint server-এ তারা তাদের এই বিশ্লেষণ নিয়ে ২০ পৃষ্ঠার একটি আর্টিকেল লিখেন, যা ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ এ নেচার পাবলিশ করে। কিন্তু সমস্যা বাধে এর কিছুদিন পর।
তাদের এই গবেষণা যেহেতু যুগান্তকারী ছিল তাই তাদেরকে তাদের এই উপাত্তগুলো আবার পর্যালোচনার করতে বলা হয়। তাই এবারও Jane S. Greaves এবং তার দল তাদের সকল প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি করেন, তবে এবার ALMA দিয়ে না করে করলেন JCMT (James Clerk Maxwell Telescope) এর সাহায্যে এবং এবারের প্রাপ্ত ডাটা পূর্বের প্রাপ্ত ডাটা হতে অনেকখানিই হতাশাজনক ছিল। তারা এবার পরীক্ষা সম্পন্ন করার আগে থেকেই ফসফিন খুঁজছিলেন, কিন্তু পাচ্ছিলেন না।[5] বরং তাদের ডাটা এনালাইসিসে Spurious Emission এর জন্য ত্রুটি ছিল বলে স্বীকারও করেছেন Greaves।
এই সমস্যা কাটতে না কাটতেই শুরু হয়ে যায় আরেকটি সমস্যা। অন্য একদল গবেষক দল দাবী করেন, এই গ্যাস আসলে ফসফিন না, বরং সালফার ডাই অক্সাইড, যা দিয়েই শুক্র গ্রহের বায়ুমণ্ডল গঠিত [5] এবং এটি জীবন ধারণের জন্য ক্ষতিকর।তাদের এই দাবী সঠিক প্রমাণিত করতে মাঠে নেমে পরেন Meadows এবং তার দল। অবশেষে তাদের ধারনা সঠিক প্রমাণিত হয় এবং শুক্র গ্রহে ফসফিন রয়েছে এমন ধারনা বিজ্ঞানী মহল থেকে চলে যেতে শুরু করে। তবে Greaves এবং তার দল এখনো মনে করেন সেটি আসলেই ফসফিন ছিল।
David Grinspoon একটি উক্তিতে এরকম বলেন যে,
“There are 1,001 reasons to go back to Venus, and if the phosphine ‘goes away’ through further observations and analysis, there will still be 1,000 reasons to go.”
এছাড়াও এই রিভিও আর্টিকেলগুলো পড়তে পারেন,
- O’Callaghan, Jonathan. “Life on Venus? Scientists hunt for the truth.” Nature 586.7828 (2020): 182-183.
- Witze, Alexandra. “Prospects for life on Venus fade-but aren’t dead yet.” Nature (2020).
- Witze, Alexandra. “Life on Venus claim faces strongest challenge yet.” Nature (2021).
References:
- BBC News বাংলা || ভেনাস বা শুক্র গ্রহে মিললো ফসফিন, তবে কি প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে সেখানে
- Nature || Phosphine gas in the cloud decks of Venus || 1-10
- Sousa-Silva, Clara, et al. “Phosphine as a biosignature gas in exoplanet atmospheres.” Astrobiology 20.2 (2020): 235-268.
- সময় || প্রাণের অস্তিত্ব মেলার পর শুক্রগ্রহের মালিকানা দাবি রাশিয়ার
- Re-analysis of Phosphine in Venus’ Clouds
- The Venusian Lower Atmosphere Haze as a Depot for Desiccated Microbial Life: A Proposed Life Cycle for Persistence of the Venusian Aerial Biosphere
Author:
K.M Shariat Ullah (km67@student.sust.edu)
EEE, SUST, Sylhet-3114, Bangladesh.