এক্সোপ্ল্যানেট খুঁজে বের করার কিছু পদ্ধতি

এক্সোপ্ল্যানেট খুঁজে বের করার কিছু পদ্ধতি

আমাদের আকাশগঙ্গা ছায়াপথ এবং পর্যবেক্ষণযোগ্য ইউনিভার্সের শত বিলিয়ন ছায়াপথে রয়েছে সূর্যের মতো বিলিয়ন নক্ষত্র। আমাদের পৃথিবী এবং অন্যান্য গ্রহগুলো যেভাবে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে, ঠিক তেমনি অন্যান্য নক্ষত্রগুলোর চারপাশে এরকম গ্রহ থাকার সম্ভাবনা আছে। যাদের মধ্যে আমরা খুব কম সংখ্যক গ্রহের সন্ধান পেয়েছি। মূলত সৌরজগতের বাইরে অন্যান্য নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকা এইসব গ্রহগুলোকেই আমরা এক্সোপ্ল্যানেট বলে থাকি। তবে কোনো কোনো এক্সোপ্ল্যানেট একই সাথে একাধিক নক্ষত্রকেও প্রদক্ষিণ করতে পারে। আবার এমন এক্সোপ্ল্যানেটের অস্তিত্বও সম্ভব যেখানে এক্সোপ্ল্যানেট মূলত কোনো নক্ষত্রকেই প্রদক্ষিণ করে না, ভাসমান অবস্থায় মহাকাশে বিরাজ করে।

1992 সালের 9 জানুয়ারি রেডিও জ্যোতির্বিজ্ঞানী Aleksander Wolskin এবং Dale Frail প্রথমবারের মতো দুইটি এক্সোপ্ল্যানেট আবিষ্কার করেন যেগুলো পালসার 1257+12 নামক একটি নিউট্রন স্টারকে প্রদক্ষিণ করছিল। পরবর্তীতে 1995 সালের 6 অক্টোবর Michel Mayor এবং Didier Queloz প্রথমবারের মতো আমাদের সূর্যের মতো একটি প্রধান পর্যায়ের নক্ষত্রকে (মেইন সিকুয়েন্স স্টার) প্রদক্ষিণ করা 51-Pegasi b এক্সোপ্ল্যানেট আবিষ্কার করেন।  51-Pegasi b এক্সোপ্ল্যানেটি  51-Pegasi নামক নক্ষত্রকে 4 দিনে একবার প্রদক্ষিণ করে। এটি আমাদের থেকে 50.6 আলোকবর্ষ দূরে এবং আমাদের পৃথিবীর প্রায় 600 গুণ বড়।  এই এক্সোপ্ল্যানেটটি আবিষ্কারের জন্য Michel Mayor এবং Didier Queloz কে ২০১৯ সালে নোবেল পুরষ্কার প্রাপ্ত হন। বিজ্ঞানীরা নানা উপায়ে এসব এক্সোপ্ল্যানেট খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। তন্মধ্যে কিছু পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব আমরা।

51-Pegasi নামক নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকা এক্সোপ্ল্যানেট আবিষ্কারের জন্য Michel Mayor এবং Didier Queloz কে ২০১৯ সালে নোবেল পুরষ্কার দেওয়া হয়।
51-Pegasi নামক নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকা এক্সোপ্ল্যানেট আবিষ্কারের জন্য Michel Mayor এবং Didier Queloz কে ২০১৯ সালে নোবেল পুরষ্কার দেওয়া হয়।
© Niklas Elmehed via The Noble Prize

Transit Method

এক্সোপ্ল্যানেট খোঁজার ক্ষেত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি Transit Method। এখন পর্যন্ত 4166 টি এক্সোপ্ল্যানেট এই পদ্ধতির মাধ্যমে আবিষ্কার করা হয়েছে, যা কি না মোট আবিষ্কৃত 5595টি (7 মার্চ, 2024) এক্সোপ্ল্যানেটের 74.4 শতাংশ। 2002 সালে প্রথম এই পদ্ধতির মাধ্যমে HD 209458 b নামক এক্সোপ্ল্যানেটটি আবিষ্কার করা হয়। প্রথমদিকে নাসা এই কাজের জন্য কেপলার টেলিস্কোপ ব্যবহার করে প্রায় 2662টি এক্সোপ্ল্যানেট আবিষ্কার করতে পেরেছিল। বর্তমানে নাসা এই কাজের জন্য TESS (Transiting Exoplanet Survey Satellite) ব্যবহার করে থাকে ।

এ পদ্ধতিটিকে এভাবে চিন্তা করা যায়, ধরা যাক অন্ধকার রাস্তায় আমাদের সামনে দূরের কোনো গাড়ির হেডলাইট জ্বালানো আছে। এখন গাড়ি এবং আমাদের মাঝ দিয়ে যদি অন্য কোনো বস্তু চলাচল করে তবে দূরের গাড়ির হেডলাইট থেকে আলো আসতে কিছুটা বাধার সম্মুখীন হবে, যার ফলে আমরা কিছু সময়ের জন্য কম আলো দেখতে পাবো।  বস্তুর আকার বড় হলে বস্তুটি বেশি পরিমাণ আলো বাধা দিবে, ছোট আকারের বস্তু কর্তৃক বাধা কম হবে ফলে বেশি পরিমাণ আলো আমাদের চোখে এসে পড়বে এবং গাড়ির হেডলাইট অপেক্ষাকৃত উজ্জ্বল দেখাবে। সুতরাং মাঝ বরাবর অতিক্রম করা বস্তুর আকার ছোট-বড় হলে, বাধা পাওয়া আলোর পরিমাণও কম-বেশি হবে। অনুরূপভাবে, কোনো এক্সোপ্ল্যানেট তার নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণকালে যখন পর্যবেক্ষক এবং নক্ষত্রের মধ্যবর্তী জায়গা অতিক্রম করে তখন এক্সোপ্ল্যানেট দ্বারা কিছু আলো বাধা পায়, ফলে পর্যবেক্ষকের কাছে নক্ষত্রের উজ্জ্বলতা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে বলে মনে হয়। তেমনি এক্সোপ্ল্যানেটটি যখন নক্ষত্র ও পর্যবেক্ষক এর মাঝপথ থেকে সরে যায়, তখন আলোক উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে হয়। নক্ষত্রকে ঘিরে এক্সোপ্ল্যানেটের এই আবর্তনের কারণে নক্ষত্রের উজ্জ্বলতার পর্যায়ক্রমিক হ্রাস- বৃদ্ধি ঘটে বলে মনে হয়। নক্ষত্রের উজ্জ্বলতার এই পর্যায়ক্রমিক হ্রাস- বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এক্সোপ্ল্যানেটের অস্তিত্ব সম্পর্কে সুনিশ্চিত হওয়া যায়।

নক্ষত্রের চারপাশে গ্রহের আবর্তনের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় লক্ষণীয়। একটি নির্দিষ্ট এক্সোপ্ল্যানেটের জন্য নক্ষত্র থেকে এর দূরত্ব, নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করার সময়কাল এবং  এক্সোপ্ল্যানেটের  আকার প্রায় নির্দিষ্ট থাকে। বর্তমান সময়ের খুবই উন্নত প্রযুক্তির টেলিস্কোপের মাধ্যমে কোনও নক্ষত্রের তুলনায় অতিক্ষুদ্র এক্সোপ্ল্যানেট দ্বারা আলোর তীব্রতার যে সামান্যতম তারতম্য হয়, সেটিও পরিমাপ করা সম্ভবপর হয়। যা উজ্জ্বলতা বনাম সময় গ্রাফের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। গ্রাফে উজ্জ্বলতার পরিমাণ সময়ের সাথে খুব বেশি কমে যাওয়া মানে হলো গ্রহটি আকারে তুলনামূলক বড়। উজ্জ্বলতা তুলনামূলক কম হ্রাস পেলে বুঝা যাবে যে, গ্রহটি আকারে তুলনামূলক ছোটI খুব স্বাভাবিকভাবেই কতক্ষণ পরপর উজ্জ্বলতার এই তারতম্য হচ্ছে তা থেকে আমরা এক্সোপ্ল্যানেটির আবর্তনকাল নির্ণয় করে নিতে পারি। 

একটি নক্ষত্রের সামনে দিয়ে এক্সোপ্ল্যানেট গেলে ঐ নক্ষত্রের উজ্জ্বলতা সাময়িক সময়ের জন্য কিছুটা কমে গেছে বলে মনে হয়। 

আবার আলোর বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার ঘটনাটি কতক্ষণ যাবত স্থায়ী হচ্ছে, তার উপর ভিত্তি করে নক্ষত্র থেকে এক্সোপ্ল্যানেটের দূরত্ব নির্ণয় করা হয়। এক্সোপ্ল্যানেটটি নক্ষত্রের কাছে থাকলে এক্সোপ্ল্যানেট দ্বারা সৃষ্ট আলোর বাধা কম সময় স্থায়ী হবে কারণ সেক্ষেত্রে তার আবর্তনকাল ছোট হয়ে যাবে অপেক্ষাকৃত দূরে থাকা এক্সোপ্যানেটের তুলনায়। কাজেই দূরের গ্রহের দ্বারা উজ্জ্বলতা হ্রাস বেশি সময় স্থায়ী হবে। এক্সোপ্ল্যানেটটি তার শক্তিশালী মহাকর্ষ বল দ্বারা আমাদের সৌরজগতের শনি গ্রহের মতো কোনো বলয় সৃষ্টি করেছে কিনা তা ঐ উজ্জ্বলতা বনাম সময় গ্রাফ থেকে বুঝা যাবে। সেক্ষেত্রে গ্রাফে এক্সোপ্ল্যানেটের পাশাপাশি বলয় দ্বারা সৃষ্ট কিছু অমসৃণতা পরিলক্ষিত হবে৷

Radial Velocity Method

দুটি বস্তুর মধ্যকার মহাকর্ষীয় বল বস্তু দুটির সংযোগকারী সরলরেখা বরাবর কাজ করে এবং  এই সরলরেখার উপর এমন একটি কাল্পনিক  বিন্দু থাকে যার গতির প্রকৃতি এককভাবে ঐ দুইটি বস্তুর গতির প্রকৃতি নির্ধারণ করে। বস্তু দুটি এই নির্দিষ্ট বিন্ধুর দিকে আকর্ষিত হয়। এই  বিন্দুটিকে বলা হয় ব্যারিসেন্টার। ঘূর্ণায়মাণ বস্তুর ক্ষেত্রে বস্তু দুইটি এই ব্যারিসেন্টারকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। তেমনি এক্সোপ্ল্যানেট এবং নক্ষত্রেরও একটি ব্যারিসেন্টার থাকে। উভয়েই মূলত ঐ ব্যারিসেন্টারকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। নক্ষত্র, এক্সোপ্ল্যানেট ও অবজার্ভার বা পর্যবেক্ষক একই তলে অবস্থান কালে যদি এদের আবর্তন পর্যবেক্ষণ করা হয়, তখন আমাদের কাছে মনে হবে যে, নক্ষত্রের দূরত্ব একবার কমছে আবার বেড়ে যাচ্ছে। যখন নক্ষত্র এবং অবজার্ভার এর মধ্যবর্তী দূরত্ব কমতে থাকে তখন নক্ষত্র থেকে যে স্পেকট্রাম বা বর্ণালী আসবে তাতে Blue Shifting ঘটবে। আবার যখন নক্ষত্র আর অবজার্ভার এর মধ্যবর্তী দূরত্ব বাড়তে থাকবে তখন নক্ষত্র থেকে আসা আলোর Red Shifting ঘটবে। এই পদ্ধতি কাজে লাগিয়েই নক্ষত্রের আশেপাশে এক্সোপ্ল্যানেটের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে সাধারণত অনেক বড় আকারের এক্সোপ্ল্যানেট আবিষ্কার করা হয়। বৃহস্পতি থেকেও বেশি  আকার সম্পন্ন এইসব এক্সোপ্ল্যানেটদের বলা হয় সুপার-জুপিটারস।

যখন নক্ষত্র পৃথিবীর দিকে আসে তখন এতে ব্লু শিফট দেখতে পাওয়া যায়। অন্যদিকে যখন নক্ষত্র পৃথিবী থেকে দূরে সরে যায় তখন এতে রেড শিফট দেখতে পাওয়া যায়।
© Alice Hopkinson, LCO

Gravitational Microlensing

আপনি হয়ত লেন্সের সাথে পরিচিত আছেন। লেন্সের কাজ হলো কোনো উৎস থেকে আগত আলোকে বাঁকিয়ে দেওয়া। এই বাঁকিয়ে দেওয়ার ধর্ম লেন্স ভেদে ভিন্ন হয়। তেমনি কোনো এক্সোপ্ল্যানেট ও তার নক্ষত্রের ভর তুলনামূলক ভাবে বেশি হলে তা এর আশে পাশের স্থান-কালকে বাঁকিয়ে দিতে পারে। ফলে  দূরের কোনো নক্ষত্র (Background Star) থেকে আগত আলো এই এক্সোপ্ল্যানেট ও তার নক্ষত্রের (Foreground Star) পাশে দিয়ে যাওয়ার সময় কিঞ্চিত বেঁকে অতিক্রম করবে। এই ঘটনাটিকে বলা হয় গ্র্যাভিটেশনাল লেন্সিং। সাধারণত মহাকাশে ভাসমান (Rogue) এক্সোপ্ল্যানেট শনাক্তকরণের জন্য এই পদ্ধতি বেশি কার্যকর।

Gravitational Microlensing এ মধ্যবর্তী Foreground Star টি ভার্চুয়াল ম্যাগনেফ্লাইং গ্লাসের মতো কাজ করে। এক্ষেত্রে যদি লেন্সিং এ ব্যবহৃত নক্ষত্রের চারপাশে কোনও এক্সোপ্ল্যানেট থাকে তাহলে Background Star এর থেকে আলো সোজাপথে আমাদের কাছে আসে না। আর এই পদ্ধতি অবলম্বন করেই লেন্সিং-এ ব্যবহৃত নক্ষত্রের চারপাশে এক্সোপ্ল্যানেট আছে কি না তা শনাক্ত করা হয়। কারণ এক্সোপ্ল্যানেট থাকলে গ্রাফে আলো সোজাপথে না আসার দরুণ কিছু অমসৃণতা তৈরি হয়। এ পর্যন্ত গ্রাভিটেশনাল মাইক্রোলেন্সিং ব্যবহার করে আবিস্কৃত এক্সোপ্ল্যানেটের সংখ্যা প্রায় 210টি। এই পদ্ধতি সর্বপ্রথম 2003 সালে সফলভাবে ব্যবহার করে এক্সোপ্ল্যানেট আবিষ্কার করা হয়েছিল।

একটি নক্ষত্রের সামনে দিয়ে আরেকটি নক্ষত্র ও গ্রহের সিস্টেম গমণ করার সময় উজ্জ্বলতা বনাম সময় গ্রাফে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিমাপ পাওয়া যায়। এটি মাইক্রো লেন্সিং এর জন্য হয়।
© Alice Hopkinson, LCO

Direct Imaging

এ পদ্ধতিতে সরাসরি এক্সোপ্ল্যানেটের ছবি তোলা হয়। বিষয়টি যেভাবে বলা হচ্ছে তা করাটা তার থেকেও কঠিন। কারণ কোনো কোনো নক্ষত্রের উজ্জ্বলতা, একে আবর্তন করা  এক্সোপ্ল্যানেটের আপাত উজ্জ্বলতা থেকে বিলিয়ন গুণ বেশি থাকে, ফলে অনেক শক্তিশালী টেলিস্কোপ ব্যবহার করেও এতো  উজ্জ্বলতার মাঝে তুলনামুলক কম উজ্জ্বল গ্রহের ছবি তোলা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই বিজ্ঞানীরা এই পদ্ধতিতে গ্রহের ছবি তোলার ক্ষেত্রে করোনাগ্রাফি অথবা স্টারশেড পদ্ধতি ব্যবহার করেন। এই পদ্ধতিতে বিশেষ উপায়ে নক্ষত্রের আলোকে বাধাপ্রাপ্ত করা  হয়। যার ফলে বিজ্ঞানীরা এক্সোপ্ল্যানেটের একটি বাস্তবসম্মত চিত্র ধারণ করতে পারেন। এই পদ্ধতিতে এক্সোপ্ল্যানেটের বায়ুমণ্ডল সম্পর্কেও ধারণা  পাওয়া যায়। এছাড়া এক্সোপ্ল্যানেট প্রাণের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে কতটা উপযোগী তাও নির্ণয় করতে পারেন বিজ্ঞানীরা। আবার নক্ষত্রটি যদি আমাদের সূর্যের মতো একটি মেইন সিকুয়েন্স স্টার হয় তাহলে ঐ নক্ষত্র ও নক্ষত্রের চারপাশের এক্সোপ্ল্যানেটগুলোর গঠনপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করে আমাদের সৌরজগতের অতীতের গঠনপ্রণালী বা ভবিষ্যতের আনুমানিক ধারণা পাওয়া যেতে পারে।

নক্ষত্রের উজ্জ্বলতাকে ঢেকে না দিলে এর পাশে থাকা অনুজ্জ্বল গ্রহটিকে দেখতে পাওয়া যায় না। © NASA/Exoplanets
নক্ষত্রের উজ্জ্বলতাকে ঢেকে দিলে এর পাশে থাকা অনুজ্জ্বল গ্রহটিকে দেখতে পাওয়া যায়। © NASA/Exoplanets

Astrometry

অ্যাস্ট্রোমেট্রি পদ্ধতিতে মূলত কোনো নক্ষত্রে আশেপাশে থাকা নক্ষত্রের তুলনায় ঐ নক্ষত্রের গতিবিধি কীরকম পরিবর্তন হচ্ছে তার দিকে খুব সূক্ষ্ম দৃষ্টি রাখা হয়। যদি নক্ষত্রের চারপাশে কোনো এক্সোপ্ল্যানেট থাকে তবে নক্ষত্র ও এক্সোপ্ল্যানেট তাদের সাধারণ ব্যারিসেন্টারকে ঘিরে আবর্তিত হতে থাকবে। অর্থাৎ, যে নক্ষত্রে এক্সোপ্ল্যানেট আছে সেটি  একই অবস্থানে স্থির থাকবে না। ফলে নক্ষত্র ও এর আশে পাশে থাকা অন্যান্য নক্ষত্রের  মধ্যবর্তী দূরত্বের আপাত পরিবর্তন ঘটবে। নক্ষত্রগুলো মাঝে দূরত্বের এই আপাত পরিবর্তন এক্সোপ্ল্যানেটের অস্তিত্ব নির্দেশ করে। তবে এই পদ্ধতিতে নক্ষত্রের চেয়ে খুব কম ভরের এক্সোপ্ল্যানেটের অস্তিত্ব বের করা যায় না, কারণ অপেক্ষাকৃত কম ভরের এক্সোপ্ল্যানেটের জন্য ব্যারিসেন্টার নক্ষত্রের খুব কাছে এমনকি এক্সোপ্ল্যানেটের ভর খুব কম হলে ব্যারিরিসেন্টার নক্ষত্রের ব্যাসার্ধের ভিতরেও অবস্থান করতে পারে। এতে অন্য নক্ষত্রের সাথে এক্সোপ্ল্যানেট সম্পন্ন নক্ষত্রের আপাত সরণ বেশি পরিবর্তিত হয় না। তাই এক্সোপ্ল্যানেটের অস্তিত্ব সম্পর্কে সুনিশ্চিত হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

2009 সালে VB10b নামক একটি এক্সোপ্ল্যানেট আবিষ্কার করা হয় যা একটি কম ভর সম্পন্ন লোহিত বামন তারা VB10 কে প্রদক্ষিণ করছিল। এক্সোপ্ল্যানেটটির ভর ছিল আমাদের বৃহস্পতির প্রায় সাত গুণ। অ্যাস্ট্রোমেট্রি পদ্ধতিতে আবিষ্কৃত এটিই প্রথম এক্সোপ্ল্যানেট। এপর্যন্ত এই পদ্ধতিতে তিনটি এক্সোপ্ল্যানেট আবিষ্কার করা হয়েছে।

তথ্যসূত্র
[১] Exoplanet Exploration: Ways to find a planet
[২] Exoplanet Detection: Transit Method

লেখকদ্বয় –

[1]সুহাস তালুকদার,
শিক্ষার্থী, সেশন: ২০২১-’২২
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, শাবিপ্রবি

[2] কে. এম. শরীয়াত উল্লাহ,
শিক্ষার্থী, সেশন: ২০১৯-’২০
ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, শাবিপ্রবি

This Post Has One Comment

  1. কল্পতরু

    খুবই চমৎকার একটি লেখা। লেখকদেরকে ধন্যবাদ।

Leave a Reply