কৃষ্ণবিবর সম্পর্কে আপনার যা কিছু জানা প্রয়োজন!
ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ
১৭৮০ এর দশকের গোড়ার দিকে জন মিশেলের ইঙ্গিত দেওয়ার পর থেকেই কৃষ্ণবিবর-এর আলোচনা ব্যাপকভাবে বৈজ্ঞানিক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্বের মধ্য দিয়ে এই বস্তুগুলো সম্পর্কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আধুনিক প্রস্তাবটি এসেছে। ১৬৮৭ সালে আইজ্যাক নিউটন বিবৃতি দিয়েছিলেন যে মহাকর্ষ বল এই মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুর মধ্যে কাজ করে। তবে তিনি নিজে কখনও এই বস্তুটির অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত ছিলেন না। কিন্তু আইনস্টাইন তার আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্বে মহাকর্ষের সম্পূর্ণ নতুন সংজ্ঞা দিয়েছেন।
তার মতে, সকল প্রকাণ্ড বস্তু স্থান-কালে বক্রতা তৈরি করে যা পরবর্তীতে মহাকর্ষ হিসেবে অনুভূত হয়। এটা বুঝাচ্ছে যে, মহাকর্ষ স্থান-কালের বক্রতা ছাড়া আর কিছুই না। জিমন্যাশিয়ামে শারীরিক ব্যয়ামের জন্য যে ট্র্যামপোলিন কাপড় ব্যবহার করা হয় এটায় যদি কেউ লাফ দেয় তবে এটা যেমন বক্রতা তৈরি করে ঠিক তেমনি প্রকাণ্ড বস্তুগুলোও স্থান-কালের চতুর্মাত্রিক চাদরকে বিকৃত করে দেয়। বস্তু যত বেশি ভারী হবে বিকৃতিও তত বেশি হবে।
ছবিসূত্র-https://www.ligo.caltech.edu/image/ligo20160211e
এখন পর্যন্ত এটাকে সকল সময়ের সবচেয়ে সুন্দর ও যৌক্তিক বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই তত্ত্বে আইনস্টাইন দেখিয়েছিলেন যে, যখনই কোনো বৃহৎ ও ভারী তারকা মরে যায়, তখন এর অবশিষ্ট ছোট অংশটি অন্তঃসার অর্থাৎ কোর হিসেবে থেকে যায়। আইনস্টাইনের ফিল্ড ইকুয়েশনর সম্ভাব্য সমাধানগুলো থেকে কার্ল শোয়ার্জস্কাইল্ড এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিল যে কোরটির ভর যদি সূর্যের ভর থেকে প্রায় তিনগুণ বেশি হয় তবে মহাকর্ষের বল অন্য সমস্ত শক্তিকে উপেক্ষা করে একটি কৃষ্ণবিবর তৈরি করে।
কৃষ্ণবিবর সম্পর্কে প্রাথমিক পারিভাষিক শব্দাবলী
এখন কৃষ্ণবিবর সম্পর্কে কিছু মৌলিক পারিভাষিক শব্দাবলী সম্পর্কে আলোচনা করা যাক
ক্রেডিট: ইসো (ESO)
ঘটনা দিগন্ত (Event Horizon)
ঘটনা দিগন্ত হলো কৃষ্ণবিবরের এমন এক অঞ্চল যেখান থেকে কোন কিছুই এমনকি আলোও বের হয়ে আসতে পারে না। এই অঞ্চলে কোন পতিত বস্তুর প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে সবকিছু স্বাভাবিক মনে হলেও বাইরের কোন ভিন্ন প্রসঙ্গ কাঠামো থেকে কোন পর্যবেক্ষকের কাছে এই ব্যাপারটা ভিন্ন মনে হতে পারে। এটি মূলত মহাকর্ষীয় সময় সংকোচনের কারণে ঘটে। মহাকর্ষীয় বলের টান বাড়ার সাথে সাথে পদার্থগুলো থেকে বিকিরিত আলোর রেড শিফট হতে থাকে এবং ভেতরে পড়ন্ত পদার্থ যতই ঘটনা দিগন্তের কাছাকাছি পৌঁছতে থাকে, অধিক রেড শিফটের কারনে পদার্থগুলো অদৃশ্য হওয়া শুরু করে। সুতরাং কৃষ্ণবিববের ঘটনা দিগন্তের গঠন সম্পর্কে একজন বহিঃস্থ পর্যবেক্ষক কখনোই ধারণা করতে পারে না।
অনন্যতা বিন্দু বা সিংগুলারিটি (Singularity)
সাধারণ আপেক্ষিকতা অনুযায়ী, কৃষ্ণবিবরের কেন্দ্রে থাকে মহাকর্ষীয় অনন্যতা বিন্দু (Singularity)। এই অনন্যতা বিন্দুটি এমন একটি অঞ্চল যেখানে স্থান-কালের বক্রতা অসীম হয়ে যায়। ধারনা করা হয় এই অনন্যতা বিন্দুর আয়তন শূন্য এবং এর রয়েছে অসীম ঘনত্ব। এই অনন্যতা বিন্দু এমন এক জায়গা যেখানে সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব কাজ করে না।
ফোটনের গোলক (Photon Sphere)
একটি ফোটন গোলক বা ফোটন বৃত্ত এমন একটি অঞ্চল যেখানে মহাকর্ষ এত শক্তিশালী যে, ফোটনগুলো এর কক্ষপথে ঘুরতে বাধ্য হয়। কৃষ্ণবিবরের চারপাশে এটি একটি শূন্য পুরুত্বের গোলাকার সীমানা যেখানে এই গোলকের স্পর্শের কাছাকাছি যে ফোটনগুলো থাকবে সেগুলো এর বৃত্তীয় কক্ষপথে আটকে পড়বে। অ-ঘূর্ণনশীল কৃষ্ণবিবরের জন্য, ফোটনের গোলকের ব্যাসার্ধ হয় শোয়ার্জশাইল্ড ব্যাসার্ধের ১.৫ গুন। অন্যদিকে ঘূর্ণনশীল কৃষ্ণবিবর এ দুটি ফোটন গোলক থাকে : একটি কৃষ্ণবিবরের ঘূর্ণনের দিকে আর অন্যটি বিপরীত দিকে ঘুরে।
এর্গোস্ফিয়ার (Ergosphere) :
ঘূর্ণনরত কৃষ্ণবিবরগুলো চারদিকে এমন এক স্থান-কাল অঞ্চল দিয়ে বেষ্টিত থাকে যেখানে স্থির থাকা অসম্ভব। স্থান-কালের এই অঞ্চলকে বলা হয় এরগোস্পিয়ার (Ergosphere)। এর্গোস্ফিয়ার থেকে বস্তু ও বিকিরণ মুক্ত হয়ে যেতে পারে। পেনরোজ প্রক্রিয়ার (Penrose Process) মাধ্যমে বস্তুগুলি এর্গোস্ফিয়ারে যত শক্তি নিয়ে প্রবেশ করে তার থেকেও বেশি শক্তি নিয়ে বের হয়ে যেতে পারে। বের হওয়ার সময় এ শক্তি পায় কৃষ্ণবিবরের আবর্তন শক্তি থেকে এবং যার ফলে পরবর্তীতে ঘূর্ণনশীল কৃষ্ণবিববের ঘূর্ণন ধীর হয়ে যায়।
অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীল বৃত্তাকার কক্ষপথ (Innermost Stable Circular Orbit) :
নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ অনুসারে, একটি কেন্দ্রীয় বস্তু থেকে পরীক্ষণীয় বস্তুগুলো কিছু ইচ্ছামূলক (arbitrary) দূরত্ব বজায় রেখে স্থিতিশীলভাবে প্রদক্ষিণ করতে পারে। সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব অনুসারে এমন একটি অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীল বৃত্তাকার কক্ষপথ (ISCO) পাওয়া যায়, যার অভ্যন্তরে কোনো বৃত্তাকার কক্ষপথের অতিক্ষুদ্র মাত্রার বিচ্যুতিও কৃষ্ণবিবরে আলোড়ন জাগিয়ে তুলে।
কৃষ্ণবিবরের ধরন :
মূলত, কৃষ্ণবিবরগুলোকে তিনটি প্রধান ভাগে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে। তা হল :
- মাইক্রো কৃষ্ণবিবর
- স্টেলার মাস কৃষ্ণবিবর
- সুপারম্যাসিভ কৃষ্ণবিবর
এখন একে একে এগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক
- মাইক্রো কৃষ্ণবিবর
এটিকে কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল কৃষ্ণবিবরও বলা হয় এবং এধরনের কৃষ্ণবিবরগুলো হাইপোথেটিকাল। তারার ভরের চেয়েও যে কম ভরের কৃষ্ণবিবর গঠিত হতে পারে, এটি ১৯৭১ সালের স্টিফেন হকিং-এর তত্ত্ব থেকে প্রথম ধারনা পাওয়া যায়। এই মাইক্রো কৃষ্ণবিবরগুলোর একটি নির্দিষ্ট ভর সীমা আছে। শোয়ার্জচাইল্ড ব্যাসার্ধ এবং কম্পটন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ধারণা অনুসারে, একটি মাইক্রো ব্ল্যাকহোলের সর্বনিম্ন ভর ২২ মাইক্রো-গ্রাম, যা প্লাঙ্ক ভর হিসাবেও পরিচিত।
মহাবিশ্বে কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল ব্ল্যাকহোলগুলোর অতীব শক্তি ও ঘনত্ব শুরুর মহাবিশ্বে জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। এই জাতীয় ব্ল্যাকহোলগুলি অস্থায়ী ছিল এবং হকিং বিকিরণের মাধ্যমে বিলীন হয়ে গিয়েছে। ১৯৭৫ সালে হকিং দেখিয়েছিলেন যে কোয়ান্টাম মেকানিকাল প্রভাবের কারণে ব্ল্যাকহোলটি আরও ছোট এবং দ্রুত বিলীন হবে। মাইক্রো ব্ল্যাকহোলটি হঠাৎ বিস্ফোরিত হওয়ার ফলে হঠাৎ কণাগুলো ফেটে যায়। গানিতিকভাবে বলা হয় এই মাইক্রো ব্ল্যাকহোলগুলো তৈরি করতে প্রয়োজনীয় শক্তি লাগে ১০১৯ গিগা ইলেকট্রোভোল্ট (GeV)। বর্তমান প্রযুক্তির মাধ্যমে সর্বোচ্চ যতটা শক্তি অর্জন করতে পারি এই শক্তি তার চেয়ে অনেক বেশি।
- স্টেলার মাস কৃষ্ণবিবর
কৃষ্ণবিবরের শ্রেণিবিন্যাসে দ্বিতীয়টি হল স্টেলার মাস কৃষ্ণবিবর। এগুলো সর্বাধিক আলোচিত কৃষ্ণবিবর যা মাইক্রোগুলো থেকে ভিন্ন আর এগুলো প্রকৃতিতে বিদ্যমান। এদের গঠনের প্রক্রিয়া বিজ্ঞানীদের জানা। নাম থেকে বোঝা যায়, একটি বিশাল তারকা মারা যাওয়ার পরে একটি স্টেলার মাস কৃষ্ণবিবর তৈরি হয়। বিশাল তারকাগুলোর কোরে ঐ রকম ভারী উপাদান থাকে যা পূর্ণ মাত্রায় ফিউশন ঘটাতে পারে।ক্রমান্বয়ে তারকাগুলো কেন্দ্রে কার্বন, নিয়ন, অক্সিজেন, সিলিকন, সালফার ইত্যাদি উপাদানের ফিউশন ঘটে।
এই আঘাতকারী আলফাকণাগুলো যখন নিকেল-৫৬ এ পৌঁছায় তখন অভ্যন্তরস্থ শৃঙ্খল বিক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে নিকেল (Nickel) দস্তাতে (Zinc) পরিণত হওয়ার যে ফিউশন সেটি তাপীয়ভাবে অনুকূল নয়। এমনকি এর ফলে কোরটি একেবারে নিঃশেষিত হয়ে যায়। এ অবস্থায় তারকাগুলোর নিজস্ব মহাকর্ষের প্রভাবেতারকাগুলো ধবংস হয়ে যায়। তারকাটি যদি অনেক বিশাল হয় তবে কোন কিছুই এর ধবংস হয়ে যাওয়া থেকে থামাতে পারে না আর তারকাটি কৃষ্ণবিবরে পরিণত হয়।
সুপারম্যাসিভ কৃষ্ণবিবর
এই সুপারম্যাসিভ কৃষ্ণবিবর হল এমন এক ধরনের বৃহত্তম কৃষ্ণবিবর যা গ্যালাক্সির (Galaxy) কেন্দ্রে পাওয়া যায়। এগুলো সূর্যের মত প্রকাণ্ড এমনকি সূর্য থেকে এক বিলিয়ন গুণ ভারীও হতে পারে। তবে এই কৃষ্ণবিবরের ঘনত্ব পানির ঘনত্বের থেকে কম হতে পারে। এর কারণটি সহজ: কৃষ্ণবিবরের শোয়ার্জচাইল্ড ব্যাসার্ধ এর ভরের সাথে সরাসরি আনুপাতিক এবং আয়তন, ব্যাসার্ধের ঘনকের সাথে সমানুপাতিক। তাহলে যা দাঁড়ায়, এর ঘনত্ব, ভরের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক হয়। অতএব, ভর যত বেশি ঘনত্ব তত কম হবে।
এছাড়াও, এই কৃষ্ণবিবরগুলোর টাইডাল ফোর্স(দুই বিন্দুর মহাকর্ষ শক্তির পার্থক্য) খুব কম। ঘটনা দিগন্তের একটি বস্তুতে টাইডাল ফোর্স উক্ত বস্তুর ভরের বর্গক্ষেত্রের সমানুপাতিক। পৃথিবীর পৃষ্ঠের থাকা একজন ব্যক্তি এবং অন্যদিকে ১০ মিলিয়ন সৌরভরের কৃষ্ণবিবরের ঘটনা দিগন্তের কাছাকাছি থাকা ব্যক্তি উভয়ই সারা শরীরে একই টাইডাল বল অনুভব করবে।
এ জাতীয় রহস্যময় বস্তুু যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জন্ম হয় তা এখনও রহস্য এবং জ্যোতিঃপদাথর্বিজ্ঞানের গবেষণার এক উন্মুক্ত ক্ষেত্র। এ নিয়ে বিভিন্ন হাইপোথিসিসও আছে। একটি হাইপোথিসিসটি হল এমন : বৃহৎ তারকাগুলোর বিস্ফোরণের ফলে এমন দশ সৌরভরের কিংবা ১০০ সৌরভরের কৃষ্ণবিবরগুলো তৈরি হয়েছে এবংআর পদার্থ বাড়ার সাথে সাথে এদের দ্বারা এ কৃষ্ণবিবরগুলোরও বৃদ্ধি হয়। কিছু বিজ্ঞানী আরও অনুমান করেছেন যে এ জাতীয় সুপারম্যাসিভ কৃষ্ণবিবরগুলো তৈরি হয়েছেওয়ার পথ হয়ত মহাবিশ্বের প্রথম তারকা মৃত্যুর পর। অবশ্য সঠিক ব্যাখ্যা আসেনি।
কৃষ্ণবিবর শনাক্তকরণ :
যেহেতু কৃষ্ণবিবরগুলো কল্পনীয় হকিং রেডিয়েশন ব্যতীত অন্য কোন তড়িৎচুম্বক বিকিরণ নির্গত করে না, তাই এদের সরাসরি শনাক্ত করা সম্ভব নয়। এ কারণে কৃষ্ণবিবরের সন্ধানকারী জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের এ ব্যাপারে পরোক্ষ পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভর করতে হয়। এই পরোক্ষ পর্যবেক্ষণগুলি ইন্টারফেরোমিটার ব্যবহার করে মহাকর্ষীয় তরঙ্গগুলি শনাক্ত করে তৈরি করা হয়। এ ছাড়া মহাকর্ষীয় লেন্সিং, কিছু অদৃশ্য শক্তির আশেপাশের বস্তুর রহস্যময় গতি বিশ্লেষণ, পদার্থের ত্বরণ ইত্যাদিও কৃষ্ণবিবর শনাক্ত করতে সহায়তা করে।
পরোক্ষ পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি ব্যবহার করে ১৯৭২ সালে কৃষ্ণবিবরের প্রথম শক্তিশালী বস্তু, সিগনাস এক্স -১ (Cygnus X-1) আবিষ্কার করা হয়েছিল।
কৃষ্ণবিবরের গবেষণায় অন্যতম বড় অগ্রগতি এসেছে ২০১৯ সালে।
এপ্রিল ১০, ২০১৯-এ ২০০ জ্যোতির্বিদদের ২-বছরের বেশি কঠোর পরিশ্রমের পরে আমাদের প্রতিবেশী ছায়াপথের প্রথম সিমুলেটেড চিত্র প্রকাশিত হয়েছে। আর তা সম্ভব হয়েছিল সুপারকম্পিউটার ও ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপের মাধ্যমে।
Image Credit: Event Horizon Telescope Collaboration
আজ যদিও আমাদের কৃষ্ণবিববরে প্রথম ছবি আছে তারপরেও বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের মধ্যে এর সত্যতা নিয়ে বিভিন্ন মতভেদ বিদ্যমান ৷ কেউ কেউ এই প্রকাণ্ড বস্তু সম্পর্কে সম্মতি দেয়, আবার কেউ কেউ দ্বিমত পোষণ করে।
সর্বোপরি এত এত বিতর্কের মাঝেও এখনকার সময়ে প্রধান আলোচনার মধ্যে কৃষ্ণবিবরের আলোচনা বিরাট অংশ দখল করে আছে।
প্রকৃতপক্ষে কৃষ্ণবিবরের কী অস্তিত্ব আছে?
সাধারণ আপেক্ষিকতার পূর্বাভাস অনুযায়ী প্রথম থেকেই জ্যোতির্বিদরা প্রকৃত গাণিতিক ব্ল্যাকহোলের অস্তিত্ব সম্পর্কে দ্বিমত পোষণ করছেন। আইনস্টাইন, এডিংটন, ম্যাক ক্রিয়া, মিত্রের মতো বিজ্ঞানীরা প্রকৃত গাণিতিক কৃষ্ণবিবরের অস্তিত্বকে বিশ্বাস করেন নি। অন্যদিকে হকিং, চন্দ্রশেখর, থর্নের মতো বিজ্ঞানীদের মধ্যে অন্যরকম মতামত ছিল।
সময়ের যাওয়ার সাথে সাথেতখন কৃষ্ণবিবরের স্বীকৃত মডেলটিতে অনেক ত্রুটি পাওয়া গিয়েছিল এবং অনেক বিকল্প মডেলের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে কয়েকটি গ্র্যাভাস্টার (gravesters), নগ্ন অদ্বৈততা (Naked Singularities) এবং মেকো (MECO) অন্তর্ভুক্ত।
এই সমস্ত মডেলগুলির মধ্যে, মেকো (MECO) বেশ আশাব্যঞ্জক। মেকো হলো চিরতরে ম্যাগনেটোস্ফেরিক সঙ্কুচিত বস্তু এবং ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী অভাস মিত্র (Abhas Mitra) এটি প্রস্তাবিত করেছিলেন এবং পরে ড্যারিল জে লেইটার এবং স্ট্যানলি এল রবার্টসন জেনারালাইজ করেছিলেন। সত্যিকারের কৃষ্ণবিবর এবং মেকো-র মধ্যে অন্যতম প্রধান পার্থক্য হ’ল মেকো তাদের নিজস্ব চৌম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে এবং এটি পর্যবেক্ষণ দ্বারা সমর্থিত একটি সত্য। এছাড়া বর্তমানে গৃহীত মডেল হিসাবে এটা বলা হয়েছে যে মেকো সিঙ্গুলারিটির মধ্যে ধ্বংস হয়ে যায় না। মেকো চিরন্তন ধ্বংসাত্মক বস্তু হয়। এগলো কেবল সিংগুলারিটিকে অসীমে আঘাত করবে।
মূল আর্টিকেল https://www.secretsofuniverse.in/black-holes-boa-18/
অনুবাদক :
রকিবুল হাসান
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ(২০১৬-১৭ ব্যাচ)
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।