পেন্টাগন ও ইউএফও দর্শন

আমরা যখনই ইউএফও চিন্তা করি তখনই আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠে একটি থালার মতো উড়ন্ত বস্তু। এ থেকে বেরিয়ে আসে মানবজাতির চেয়েও উন্নত এক প্রজাতি যাদেরকে আমরা নাম দিয়েছি এলিয়েন। ইউএফও এর পূর্ণরূপ হচ্ছে Unidentified Flying Object বা অশনাক্ত উড়ন্ত বস্তু। আকাশে উড়ন্ত অবস্থায় যেসকল বস্তু পাওয়া যায়, যাদেরকে আমরা আমাদের পরিচিত কোনো বস্তুর সাথে তুলনা করে শনাক্ত করতে পারি না, সেসকল বস্তুকে ইউএফও বলে। এই  সঙ্গানুসারে আকাশের অশনাক্তকৃত কোনো গ্রহাণুও ইউএফও হতে পারে। তবে আমরা এলিয়েন ও ইউএফও নিয়ে যেসকল চিন্তা ভাবনা করি, এলিয়েনরা ঠিক সেইরকমই কিনা কিংবা আদৌ তারা পৃথিবীতে এসেছে কিনা, তা নিয়ে আমাদের আশেপাশের মানুষের মাঝে দেখা যায় তুমুল বিতর্ক।  

২০১৯ সালের দিকে ইন্টারনেট জগতে একটি ছবি বেশ তোলপাড় সৃষ্টি করে, ছবিটি ছিল একটি ইউএফওর।  তোলপাড় হবে নাইবা কেনো? ছবিটি তুলেছেন স্বয়ং আমেরিকান নেভি, এরকম একটি তথ্যও সাথে ফাঁস হয়েছিলো [1] কিন্তু তখনো আমেরিকান সামরিক বাহিনী এর প্রতি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। অনানুষ্ঠানিকভাবে একজন মার্কিন বিমান বাহিনীর পাইলট জানান, “আমি এমন বস্তু অনেক দেখেছি। কর্তা ব্যক্তিদের জানিয়েছি। কিন্তু কেউ পাত্তা দেয়নি।” তার সাথে অবস্থানরত বাকি চারজন পাইলট জানান, “তারা এতদিন কিছু বলেননি কারণ লোকে এ নিয়ে হাসাহাসি করবে।  কিন্তু তারা সকলেই এক সাথে এই ধরনের বস্তু দেখেছেন।” শুধু একবার না! দিনের পর দিন তারা এমন বস্তু উড়ে বেড়াতে দেখেছেন, যার কোনো ব্যাখ্যাই তারা দাঁড় করাতে পারেননি। জনপ্রিয় মার্কিন জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী ও লেখক নিল ডি গ্রাস টাইসন তার এক টুইটেও এ ব্যাপারে কথা বলেন। তিনি একে ইউএফও বলতে নারাজ। তিনি মনে করেন, ছবিগুলো সত্যিকার অর্থে কীসের তা ছবির নিম্ন মানের কারণে বলা মুশকিল।  [2]

ঘটনাটি ২০২১ সালে এসে আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। কেননা এবার মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার হেডকোয়ার্টার পেন্টাগন থেকে একটি বিবৃতিতে জানানো হয়, ইউএফও নিয়ে যে তিনটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে, তা সম্পূর্ণ আসল ছবি ও এতে কোনো প্রকার কারসাজি করা হয়নি। পেন্টাগণের পক্ষ থেকে সু গগ জানান, “ছবিগুলো আসলেই মার্কিন নেভিদের তোলা ছবি ছিলো এবং এগুলো সম্পূর্ণ অবিকৃত ছবি।”  তিনি আরো জানান, “ সুরক্ষা বাহিনীর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আর কোনো তথ্য সাধারণ নাগরিকদের দেওয়া হবে না বা তাদের সাথে কোনো ভিডিও ফুটেজ শেয়ার করা হবে না।” [3]

তিনটি ছবি ছিল তিনটি ভিন্ন ভিন্ন ইউএফওর। এগুলোর মধ্যে একটি ছিল ত্রিভুজাকৃতির একটি বস্তু, একটি গোলকাকৃতির বস্তু ও একটি লিচু ফলের আকৃতির। 

এবার একটু এলিয়েন বিষয়ে আসি। এতক্ষণ যা যা বললাম, তা দিনের আলোর মতো সত্য এ ব্যাপারে কারো কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু ইউএফও মানেই কি এলিয়েন? উত্তর হচ্ছে না। ইউএফও এর পূর্ণরূপ হচ্ছে Unidentified Flying Object তথা শনাক্ত করা যায় না এমন উড়ন্ত কোনো বস্তু। আপনি যদি এখন একে এলিয়েন বলে শনাক্তই করে ফেলেন তবে এটি আর আন আইডেন্টিফাইড রইবে না, তথা ইউএফও থাকবে না। মোদ্দা কথা, ইউএফও ও এলিয়েন টার্মদ্বয় স্ববিরোধী। একটি দ্বারা অপরটিকে কখনোই বুঝাবে না। প্রশ্ন হতে পারে, আমরা যে ইউএফও নিয়ে এতক্ষণ আলোচনা করলাম তা আসলে কী? যে কোনো কিছুই হতে পারে, যেহেতু এটি একটি অশনাক্তকৃত বস্তু। এটি হতে পারে একটি গ্রহাণু, হতে পারে উল্কা কিংবা হতে পারে একটি এলিয়েন স্পেসশিপ। 

কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ ও কুটকৌশলী মনে করেন, এগুলো রাশিয়ার বানানো উন্নত প্রযুক্তির নানা স্পেস শাটল। এরা যখন নিচে নেমে এসেছিলো তখন এদেরকে ছবিতে আবদ্ধ করে মার্কিন নেভীর একদল ক্যাডেট। তবে আমরা নিশ্চিতভাবে কিছুই বলতে পারছি না। কী হতে পারে এ রহস্যময়ী বস্তুত্রয়?

তথ্যসূত্র :
[1] Defense Department confirms leaked video of unidentified aerial phenomena is real
[2] Neil deGrasse Tyson || Twitter 
[3] Pentagon confirms leaked photos and video of UFOs are legitimate

লেখক –
কে. এম. শরীয়াত উল্লাহ,
শিক্ষার্থী, ইলেকট্রিকাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ,
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

Leave a Reply